যাকাত যাকাতের বিধান যাকাত ফরয হওয়ার সময় যাকাত কার ওপর ফরয যাকাতের শর্ত যাকাতের নেসাব ইসলামে যাকাত যাকাতের গুরুত্ব

যাকাতের অর্থ, ফরয হওয়ার সময় ও নির্দেশনা — হাদীসসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা

بَابٌ فِي زَكُوةِ السَّائِمَةِ
অধ্যায় : মুক্তভাবে বিচরণকারী পশুর যাকাত
নিম্নোক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ কর এবং সংশ্লিষ্ট প্রশ্নাবলির [মূল কিতাব পৃষ্ঠা নং ২২৩] উত্তর দাও :
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ حَدَّثَنَا زَكَرِيَّا بْنُ إِسْحَاقَ الْمَكِّيُّ عَنْ يَحْيَى بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ صَيْفِيَّ عَنْ أَبِى مَعْبَدٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ إِنَّكَ تَأْتِي قَوْمًا أَهْلَ الْكِتَابِ فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أنْ لا إلهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّى رَسُولُ اللَّهِ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوكَ لِذلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوكَ لِذلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ إِنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةٌ فِي أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ فِى فُقَرَائِهِمْ فَإِنَّ هُمْ أَطَاعُوكَ لِذلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ
أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهَا لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ .

হাদীসের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ
সংকলন তথ্য : আলোচ্য হাদীসটি প্রখ্যাত হাদীসবিশারদ ইমাম আবু দাউদ সোলায়মান ইবনুল আশয়াস আস সিজিস্তানী (র) সংকলিত হাদীসশাস্ত্রের অন্যতম প্রামাণ্যগ্রন্থ সুনানু আবি দাউদের, কিতাবু যাকাত -এর অন্তর্গত بَابٌ فِي زَكُوةِ السَّائِمَةِ থেকে সংগৃহীত ।

হাদীস প্রসঙ্গ : রাসূল (স) হজরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা)-কে শাসনকর্তা হিসেবে ইয়েমেনে পাঠানোর প্রাক্কালে যে কয়টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন, আলোচ্য হাদীসে তারই বর্ণনা উপস্থাপিত হয়েছে।

• ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ : ইমাম আবু দাউদ (র) বলেন, আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন আহমদ ইবনে হাম্বল (র)। তিনি বলেন, আমাকে বর্ণনা করেছেন ওয়াকী । তিনি বলেন, আমাকে বর্ণনা করেছেন যাকারিয়া ইবনে ইসহাক আল মাক্কী, তিনি – ইয়াহইয়া ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সাইফী থেকে। তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন আবু মাবাদ থেকে তিনি ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) মুয়ায (রা)-কে ইয়েমেনে প্রেরণের সময় বলেন, তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছ যারা “আহলে কিতাব” (অর্থাৎ ঐশী গ্রন্থের অধিকারী)। অতএব তুমি তাদেরকে নিম্নোক্ত কথা গ্রহণে আহব্বান করবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রাসূল। যদি তারা স্বীকার করে নেয় তবে, তুমি তাদের বলবে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন। যদি তারা তা মেনে নেয় তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পদের মধ্য হতে কিছু অংশ সদকা বা দান করা ফরয করেছেন যা তাদের ধনীদের নিকট হতে গ্রহণ করে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করবে। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তুমি তাদের উত্তম মাল (যাকাতস্বরূপ) গ্রহণ করা হতে বিরত থাকবে. এবং তুমি মজলুমের (অত্যাচারিতের) বদ-দোয়াকে ভয় করবে। কেননা মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মাঝে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে না (অর্থাৎ মজলুমের বদ-দোয়া বিনা বাধায় আল্লাহর নিকট পৌঁছে যায়)।
• সমাপনী : দাওয়াত ও তাবলীগের পদ্ধতি এবং কৌশল বর্ণনা করার পাশাপাশি আলোচ্য হাদীসে রাসূল (স) ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম উৎস যাকাত আদায় ও বণ্টনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তর।
السؤالُ (۱) : مَا مَعْنَى الزَّكوة؟ وَمَتَى فُرِضَتْ؟ بَيِّنْ .
أوْ مَا مَعْنَى الزَّكَوةِ؟ مَتَى فُرِضَتِ الزَّكُوةُ وَعَلَى مَنْ تَجِبُ؟.
» প্রশ্ন : ১,الزَّكوة; অর্থ কী? যাকাত কখন ফরয হয়? বর্ণনা কর।
অথবা, যাকাত অর্থ কী? যাকাত কখন ফরয হয়েছে এবং কার ওপর ফরয ?

উত্তর।। الزَّكوة:-এর আভিধানিক অর্থ: الزَّكوة শব্দটি একবচন, زكوات বহুবচনে ব্যবহার হয়। এর অর্থ হচ্ছে-
১. النمو তথা বৃদ্ধি পাওয়া ।
২. اطهارة তথা পবিত্রতা।
৩. البركة তথা প্রাচুর্য ।
৪. المدح তথা প্রশংসা।

যাকাতকে এজন্য زكوة বলা হয়, এতে একদিকে যেমন সম্পদ বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে তেমনি যাকাতদাতার মালের পবিত্রতা অর্জন হয় ।

زكوة- এর পারিভাষিক সংজ্ঞা : যাকাতের পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রদানে হাদীসবিশারদগণের বক্তব্য নিম্নরূপ-
১. দুররুল মুখতার গ্রন্থকার বলেন-
الزَّكُوةُ هِيَ تَمْلِيْكُ جُزْءِ مَالِ عَيَّنَهُ الشَّارِعُ لِمُسْلِمٍ فَقِيْرٍ غَيْرِ هَاشِمِيٌّ وَلَا مَوْلاهُ مَعَ قَطْعِ الْمَنْفَعَةِ عَنِ الْمُمَلَكِ مِنْ كُلِّ وَجْهِ لِلَّهِ تَعَالَى .
অর্থাৎ, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে শরীয়তপ্রবর্তক কর্তৃক নির্ধারিত মালের একাংশ হাশেমী ও তাদের দাসদাসী ব্যতীত অন্য মুসলিম দরিদ্রকে বিনাস্বার্থে প্রদান করার নাম হচ্ছে যাকাত ।

২. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (র) বলেন- নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তার থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ হাশেমী ব্যতীত অন্যান্য দরিদ্রদেরকে প্রদান করার নাম যাকাত।

মোটকথা, কোন স্বাধীন সুস্থ জ্ঞানী মুসলমানের মালিকানায় যদি সারা বছর খরচান্তে দায়মুক্তভাবে সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত থাকে এবং এক বছর অতিক্রম করে তাহলে উক্ত সম্পদের শতকরা আড়াইভাগ হারে যাকাত দিতে হবে।

যাকাত ফরয হওয়ার সময়কাল : যাকাত কখন ফরয হয়, এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। যেমন-
১. ইবনে খোযায়মার অভিমত : ইবনে খোযায়মা (র) বলেন, হিজরতের পূর্বে যাকাত ফরয হয়।
২. জমহুরের অভিমত : জমহুর ওলামার মতে, যাকাত হিজরতের পর মদিনায় ফরয হয়।
৩. নবুবীর অভিমত : ইমাম নবুবী (র) বলেন, যাকাত ফরয হয় দ্বিতীয় হিজরীতে।
৪. ইবনুল আসীরের অভিমত : ঐতিহাসিক ইবনুল আসীর (র) বলেন, যাকাত ফরয হয় নবম হিজরীতে।
৫. তারীখুল ইসলাম গ্রন্থকারের অভিমত : তারীখুল ইসলাম গ্রন্থকার হিজরী প্রথম সনের কথা উল্লেখ করেছেন।

যাদের ওপর যাকাত ফরয : যাদের ওপর যাকাত ওয়াজিব, তাঁদের পরিচয়ে ফিকহশাস্ত্রবিদগণ বলেছেন-
১. মুসলমান হওয়া। সুতরাং অমুসলিমের ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না।
২. স্বাধীন হওয়া। সুতরাং গোলামের ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না ।
৩. জ্ঞানসম্পন্ন ও বালেগ হওয়া। সুতরাং পাগল, জ্ঞানহীন ও ছোট শিশুর ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না।
৪. পূর্ণ নেসাবের মালিক হওয়া। সুতরাং নেসাব পূর্ণ না হলে কারো ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না ।
৫. ঋণগ্রস্ত না হওয়া। সুতরাং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না।
৬. মালের ওপর একবছর অতিবাহিত হওয়া।
৭. সম্পদ বর্ধনশীল হওয়া। যেমন- গরু, ছাগল, কৃষিজাত ফসল, মধু, খনিজসম্পদ ব্যবসার জন্য,
নগদ অর্থ, ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ক্রীত মালামাল বর্ধনশীল, তাই এগুলোর উপর যাকাত ধার্য হবে। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যবহারের মালসম্পদ এবং নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদির উপর যাকাত নেই।
৮. যাকাতের মাল পূর্ণ নেসাব পরিমাণ হওয়া। নেসাব বলা হয় শরীয়ত নির্ধারিত নিম্নতম সীমা বা পরিমাণকে ।
উপরিউক্ত শর্তগুলো যার মধ্যে পাওয়া যাবে। তার সঞ্চিত মালের মূল্য হিসাব করে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত আদায় করতে হবে।